ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রায় তিন মাসের মধ্যেই আমেরিকায় ৪০ মিলিয়নের ও বেশী লোক বেকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। চাকরি হারালে তো বটেই, এমনকি উপার্জন কমে গেলে ও এদেশে কোটি কোটি লোক তাদের স্বাস্থ্য বীমা হারাবে। ফলশ্রুতিতে মেডিকেইডে অন্তর্ভুক্তির আবেদন হু হু করে যে বেড়ে যাবে তা বলাই বাহুল্য। ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৩৭টি রাজ্যের স্বল্প আয়ের বাসিন্দারা। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট ৩৭টি স্টেটস ‘এফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট‘ মেডিকেইড পরিবর্ধন বা এক্সপান্সন এ অন্তর্ভুক্ত আছে। বাদবাকী স্টেটগুলো অযোগ্য হিসেবে গণ্য বিধায় অথবা এফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট এ আওতাভুক্ত হতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এদের অবস্থা কোভিড -১৯ পেন্ডেমিক প্রাদুর্ভাবে দুর্বিসহ অবস্থায় উপনীত হয়েছে। মেডিকেইডের মতো কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে বেড়ে যাওয়া মানে চক্রাকার প্রবাহের বিপরীত স্রোতে অবগাহনের সামিল। অন্য কথায়, কর থেকে পাওয়া আয় বা রেভেনিও যা কর্মসূচীটিকে সহায়তা করে, ব্যয় বৃদ্ধি পেলে তা সঙ্গত কারণেই হ্রাস পেতে থাকে। কোভিড -১৯ পেন্ডেমিক কোন সাধারণ ক্রাইসিস নয়। মেডিকেইড এজেন্সিগুলো গ্রাহক বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা, ক্লিনিক ও আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং করোনা সময়ে এ সমস্যা চলমান থাকবে। জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপত্তা বেষ্টনী বা সেফটি নেট প্রদান মূলত মেডিকেইডই করে থাকে যদি ও মেডিকেয়ার ও এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শেষোক্ত ইনসুরেন্সে আওতাভুক্ত যারা তাদের আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো।
মেডিকেইড প্রোগ্রামের অর্থায়ন রাজ্য সরকার এবং ফেডারেল গভর্নমেন্ট – এ দু উৎস থেকেই আসে। মেডিকেইড খরচের যে অংশ ফেডারেল সরকার বহন করে তাকে বলা হয় ‘ফেডারেল গভর্নমেন্ট মেডিকেল এসিসটেন্স পারচেনটেনজ’ বা ‘ম্যাচ রেট’। প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্তদের আর্থিক অবস্থা ও অন্যান্য কিছু সুচকের নিরিখে এবং রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার আলোকে ম্যাচ রেট স্থির করা হয়।
ফেডারেল গভর্নমেন্ট একজন রোগীর চিকিৎসা ব্যয়ের কত অংশ পরিশোধ করবে এর কোন স্থিরকৃত সীমারেখা নেই তবে স্টেটকে তার অংশ দিতেই হবে। তবে, ওয়াশিংটন, ডিসি সহ ৩৭ টি অধিভুক্ত বা এক্সপান্সন ষ্টেটের অবস্থা বাকী ১৪টি ষ্টেটের চেয়ে ভিন্ন। এফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট আওতাধীন এসব ষ্টেটগুলোর যারা উপযুক্ত তারা শতকরা ৯০ ভাগ হারে ম্যাচ রেট পায়। এক্সপান্সন প্রোগ্রামে খরচ প্রায় ২৫% বেশী হলে ও তা ফেডারেল সরকারের ভর্তুকি দিয়ে পুষিয়ে দেয়। এ সুবিধে ষ্টেটের সেফটি নেট হাসপাতালগুলো ও পেয়ে থাকে বিধায় ষ্টেট অন্তরভুক্তি বাড়াতে পারে। এতে রাজ্য সরকারের আয় থেকে তেমন খরচ জোগান দিতে হয়না। যে বিষয়টি এখানে সবিশেষ গুরুত্ব বহন করে তা হল মেডিকেইড সুবিধে পরিবর্ধন করলে ও অন্যান্য ষ্টেট গভর্নমেন্ট প্রোগ্রামগুলোর তেমনভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়না। ষ্টেটের খরচ নির্বাহের অগ্রাধিকার ও তেমন পরিবর্তন করতে হয়না। তবে, এ কথা ও সত্য যে কোভিড-১৯ পেন্ডেমিকের অব্যাহত উপস্থিতির ফলশ্রুতিতে হেলথ ইন্সুরেন্সের প্রয়োজন প্রচুর বাড়বে। এ জান্য বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার নিশ্চিতভাবে অর্থ সঙ্কটে পড়তে পারে, বিশেষত যে সব ষ্টেটগুলোতে ট্যাক্স থেকে আহুত রেভেনিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। এক্সপান্ডডেড মেডিকেইডের আওতাধীন ষ্টেটগুলোতে স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য পান্ডেমিকের কারণে আর্থিক ও হেলথকেয়ার সমস্যা মোকাবেলা করা তেমন কঠিন হবেনা।
গতানুগতিক বা ট্রেডিশনাল মেডিকেইডে অন্তর্ভুক্ত স্বল্প আয়ের জনগুষ্টির জন্য পেন্ডেমিক থাকাকালীন বা পরবর্তী বেশ কিছুদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যা সামাল দেয়া কঠিন হবে। এ দলভুক্ত যারা তাদের বেশিরভাগই স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তান, গর্ভবতী মহিলা, সন্তানের উপর নির্ভরশীল পিতামাতা, বিকলাঙ্গ বা ‘স্পেসাল নীডস’ পর্যায়ের মানুষ। ৬৫ বছর বা তার বেশী বয়সের স্বল্প আয়ের লোকজন ও এ ক্যাটেগরিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য। গতানুগতিক মেডিকেইডে সুবিধা নেয়ার মাপকাঠি সব ষ্টেটে এক রকম নয় যেমন নয় ম্যাচ রেট ও। এর গড় নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কা মতো উচ্চ আয়ের ষ্টেটগুলোতে ৫৭% আবার মিসিসিপি’র মতো মিন্ম আয়ের রাজ্যে প্রায় ৭৮%। এখানে উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবেনা যে গতানুগতিক মেডিকেইড ভোগ করে যারা তাদের প্রায় সবাই বৃদ্ধ বয়সের এবং বিভিন্ন জটিল ব্যাধি আক্রান্ত বিধায় কোভিড-১৯ এ সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক বেশী।
এদের অধিকাংশই সেবাকেন্দ্রে থাকেন যেখানে দীর্ঘমেয়াদী সেবা প্রদান করা হয়। এগুলো মেডিকেইড এর উপর নির্ভরশীল। এক্সপান্সন ষ্টেটগুলোর চেয়ে সমস্যা গতানুগতিক মেডিকেইড আওতাভুক্ত ষ্টেটগুলোতে অনেক বেশী কারণ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ভর্তুকি এরা তেমন বেশী পায়না। কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে সুস্থ হয়ে যে সমস্থ রোগী দীর্ঘ মেয়াদের পুনর্বাসনে যাবে তাদের করছের সিংহ ভাগ ষ্টেট গভর্নমেন্টকে বহন করতে হবে। এ কারণে ষ্টেট বাজেটে অকল্পনীয় চাপ পড়বে। এ অবস্থা উত্তরণে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই। করোনা সময়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে যে ষ্টেটগুলো নন-এক্সপান্সন রয়ে গেছে সেগুলোর ‘মেডিকেইড গ্যাপ’ পুরণ করা সত্বর প্রয়োজন। এক্সপান্সন ষ্টেটের পরিগণিত হতে রাজি হলে অন্তত তিন বছরের জন্য ফেডারাল ভর্তুকি ১০০% করার চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। কোন কোন ষ্টেট এফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট এর আওতায় আসতে রাজী না হলে সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বিকল্প কৌশল নিতে পারে যাতে সমস্ত স্বল্প আয়ের সকল জনসাধারণকে ভর্তুকি দিয়ে হলে ও এ অ্যাক্টের আওতায় আনা যায়। ষ্টেট পর্যায়ে ও ফেডারেল সরকারের অংশগ্রহণ বা শেয়ারিং আরও উদার ধরনের হওয়া প্রয়োজন। তবে, নির্বাচনের বছরে রাজনৈতিক দল দুটো এ ব্যাপারে ঐক্যমত আশা করা দুরাশাই মনে হয়। তবে, নিঃস্ব, গরীব, অসহায় ও স্বল্প আয়ের জনসাধারণের পাশে রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে এ করোনা সময়ে দাঁড়াতে পারলে গণতন্ত্র, সাম্য ও মানবতার সেবা- এমন সব মূল্যবোধকে প্রোজ্জ্বলতর করা যাবে নিঃসন্দেহে।
Posted ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh