ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
ষষ্ট অংশ : গত সংখ্যায় রিপাবলিকান পার্টির আদর্শ , উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বেশ স্পষ্ট করেই বলেছিলাম যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দলটির দর্শনগত আদর্শে বা ফিলসপিকাল আইডিয়ালসে অনেক পরিবর্তন এনেছেন । তার অনেক কার্যকলাপই স্বীয় ব্যবসায়িক এবং পারিবারিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে । লজ্জা শরমের তোয়াক্কা না করে ছেলেমেয়েদের , এমনকি মেয়ের জামাইকে ও হোয়াইট হাউসে এডভাইজর হিসেবে এমন করে নিয়োগ দেবার নজির আর কোন প্রেসিডেন্ট করেছেন কিনা জানিনা । যোগ্য লোকদের চাকরী থেকে সরিয়ে রাজনৈতিক লোকদের নিয়োগ দিয়ে কুখ্যাত ঝঢ়ড়রষং ঝুংঃবসং এর যথেচ্ছ ব্যবহার প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জাক্সনকে (আমেরিকার ৭ম প্রেসিডেন্ট) যেমন কলঙ্কিত করেছে তেমনি স্বীয় স্বার্থে এমনতরো নিয়োগ ও প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ব্যবসায়িক স্বার্থ , বিশেষত দেশের বাইরে নিজের ব্যবসা সুবিধা চালু রাখার কারণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবেন ।
১৭৯২ সালে ফেডারালিস্টদের বিরোধিতা করে থমাস জেফারসন, জেমস মেডিসন এবং অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের নেতৃত্বে ডেমোক্রেট -রিপাব্লিকান পার্টি গঠিত হয়। এ দলটিই বর্তমানের ডেমোক্রেটিক পার্টি। রিপাবলিকান পার্টি নামের দলটির প্রতিষ্ঠা ১৮৫৪ সালে, ডেমোক্রেটিক পার্টির ৬২ বছর পরে । ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে পরিবর্তন ও প্রগতির পক্ষে। প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট প্রবর্তিত নিউ ডিল দর্শন ও আদর্শ দলটিকে প্রগতিবাদী বাম পন্থী দল হিসেবে একশ বছরের ও বেশি সময় ধরে (১৯৬৪) মঞ্চে রাখতে সমর্থ হয় । আজতক ও সাম্য , সামাজিক ও কমুনিটির সুযোগ-সুবিধা আদায়ের প্রতি আনুগত্য ও দায়িত্ববোধ দলটিকে রিপাবলিকান পার্টি’র ব্যাক্তি স্বাতন্ত্র্য বা ইন্ডিভিজুয়ালিজম থেকে ভিন্ন মর্যাদায় সমাসীন করে রেখেছে ঐতিহাসিক ভাবে ডেমোক্র্যাটিক দল সরকারের ভূমিকাকে সামাজিক উন্নয়য়ের মাধ্যম হিসেবে দেখে। যে দর্শন ও আদর্শ নিয়ে দলটি কাজ করতে চায় তা হোল জনমানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করে উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধনের সুযোগ সৃষ্টি ও মানুষে মানুষে সমতা আনয়নের বৃহৎ লক্ষ্য অর্জন। দলটি তাই ট্যাক্স বাড়ানো এবং বড় কলেবরের সরকার গঠনে বিশ্বাস করে। জিনিষপত্রের মূল্য নিয়ন্ত্রণ মার্কেটের উপর ছেড়ে না দিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখা শ্রেয় বলে মনে করে । বাজার অর্থনীতিতে দলটির বিশ্বাস তেমন নেই । জনকল্যাণ মূলক সহায়তা প্রোগ্রাম , যেমন ফুড ষ্ট্যাম্পস , অতিরিক্ত পুষ্টি সহায়তা কর্মসূচীর বা ঝঘঅচ এর কলেবর ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য ডেমোক্রেট দল আপ্রাণ চেষ্টা করছে । সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এফোরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট বা ওবামাকেয়ার চালু রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে দলের নেতারা ।
সামরিক শক্তি সংহত করে মানব কল্যানমূলক কর্মসূচী গ্রহণ ও সম্পরসারনের পক্ষে ডেমোক্রেটিক পার্টি । শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে সহযোগিতা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে দলটি বিশ্বাস করে । অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনোভাব পোষণকারী ডেমোক্রেটিক পার্টি সকল লিঙ্গের, গে , লেসবিয়ান বা সমকামী মানুষের সম অধিকার নীতি (বিয়ে , ইন্সুরেন্স সম্পতিতে অংশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ও) এবং জন্মশাসন ও জীবন রক্ষার প্রয়োজনে গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করাকে (এবরশন) আইনানুগ মনে করে ; পাপ মনে করেনা । চাকুরীর বেলায় সকল লিঙ্গের মানুষের , এমনকি ট্রেন্সজেন্ডারদের ও সমান আধিকার প্রদান করা ডেমোক্রেটিক পার্টি জোরালো ভাবে সমর্থন করে । যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সজেন্ডারদের বাথরুম ব্যবহার করতে দিতে নারাজ সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়ার করার পক্ষে দলটি । তাছাড়া , ডেমোক্রেটিক দল ডেথ পেনালটি রদ করার পক্ষে । সর্বনিন্ম বেতন-ভাতা বাড়ানোর পক্ষে ও দলটি কাজ করে যাচ্ছে ।
আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের প্রতি ডেমোক্রেটিক পার্টি সহানুভূতিশীল । ড্রিম অ্যাক্টের মাধ্যমে শর্তযুক্ত রেসিডেনসি প্রদানে দলটি রাজী সবসময় । কিন্তু রিপাবলিকানদের কঠোর বিরোধীতার মুখে এ সংক্রান্ত বিল পাশ হয়নি । ডেমোক্রেটরা উদার মনোভাবাপন্ন বিধায় মহিলাদের প্রেসিডেন্ট , ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে না । ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে যেমন প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিয়েছিল এবার , অর্থাৎ ২০২০’র নির্বাচনে ও জো বাইডেন রানিংমেট হিসেবে কামালা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছেন । জনপ্রিয় ভোট বেশী পেইয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটন কিন্তু ইলেকটরস ভোট বেশী পাওয়ার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে যান । হিলারি ক্লিনটন কেন স্টেট প্রতিনিধি ভোট কম পেয়েছেন বিষয়টি পুঙ্কানুপুঙ্খ কারণ বিশ্লেষণ করলে আমেরিকার সমাজ ও এর অধিকাংশ মানুষের কিছু লালিত রক্ষণশীল মানসিকতা ও মূল্যবোধের উল্লেখ করতেই হয় । দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০% ক্রিস্তিয়ান শ্বেতাঙ্গ । এদের মধ্যে নারী নেতৃত্ব তেমন গ্রহণযোগ্য নয়।
ইদানীং এ ব্যাপারে মনোভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সত্য তবে হিলারি ক্লিনটনের গ্রহণযোগ্যতা বয়স্কা শ্বেত মহিলা , ইভানজেলিকান ও গ্রামীণ সমাজে ছিল না বললেই চলে। প্রায় ৭০ বছর আন্দোলন করার পর নারী ভোটাধিকারের ব্যাপারে ১৯১৯ সালে এক সংশোধনী প্রস্থাব করা হলে ১৯২০ সালের অগাস্ট মাসে তা গৃহীত হয় । হিলারি ক্লিনটনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি মনস্তাত্ত্বিক ভাবে এক শ্রেণীর আমেরিকানদের কাছে বড়ো রকমের ধাক্কা খায় । আশা করা অসঙ্গত হবেনা যে জো বাইডেনের ব্যক্তিত্ব , অভিজ্ঞতা , আচার-আচরন ইত্যাদির নিরিখে ট্রাম্পের থেকে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশী বলে অনেকেরই ধারনা। তাঁর রানিংমেট কামালা হ্যারিস খোলামেলা মন-মানসিকতা সম্পন্ন বাদামি গাত্রবর্ণের মহিলা । সৎ , পরিশ্রমী সিনেটর হারিস আশা করা যায় জুটিটির জন্য দায় না হয়ে আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন , ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অমূল্য সম্পদ হিসেবে জ্বলজ্বল করবেন রাজনীতির মাঠে , হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট হলে তাঁর প্রতিভার সাক্ষর রেখে ইতিহাসে ভাস্বর হয়ে থাকবেন।
Posted ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh