ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
কোভিড-১৯ বিগত ৮-৯ মাস যাবত সারা বিশ্বের মানুষের জন্য সীমাহীন অসহায়ত্ব আর প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির খবরই নিয়তই নিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এ সংবাদটি দুঃখজনক নিঃসন্দেহে। নির্বাচনের মাত্র তেত্রিশ দিন পূর্বে এ সংক্রমণ হওয়ায় রাজনীতিতে এর প্রভাব কি হবে তা ভাবনার বিষয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব সময়ই মনে করে আসছিলেন করোনা তাঁর ধারেকাছে ভিড়তে পারবেনা। করোনা টেস্ট পজিটিভ আসায় বিষাদময় সময়ে তিনি স্বভাবতই নাখোশ। তবে সব কিছুকে তুড়ি মেরে মাত্র তিন দিনের মাথায় হোয়াইট হাউজে চলে এসেছেন। হাসপাতালে থেকে ও গত ১০/০৪/২০২০ তারিখে মোটরে করে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় দাঁড়ানো সমর্থকদের প্রতি হাত নাড়িয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং উৎসাহ দেন। পুনর্বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যে করেই হোক অধিষ্ঠিত হওয়ার দুর্বার আকাঙখা তাঁকে এমনই অন্ধ করে ফেলেছে যে অন্যরা যে তাঁর কারণে সংক্রমিত হতে পারে এ সত্যের মোটে ও তোয়াক্কা করেন বলে মনে হয়না ।
করোনা সারা বিশ্বে আতংকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । আজকের (অক্টোবর ০৫,২০২০)পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫,০৬০,৩০০ , মৃত্যুর সংখ্যা ১,০৩৫,৪৭৯ । যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা যথাক্রমে ৭,৪১৯,০৩৩ ও ২,০৯,৭৩৪ (ংড়ঁৎপব: ঔড়যহ ঐড়ঢ়শরহং ধং য়ঁড়ঃবফ নু ঃযব ঈঘঘ) । প্রাদুর্ভাবের প্রকোপ যুক্তরাষ্ট্রে সপ্তাহ তিন আগে নিউ ইয়র্ক , নিউ জার্সি সহ বেশ কিছু রাজ্যে উল্লেখযোগ্যা হারে কমে গেলে ও হোয়াইট হাউজ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য যে তাড়া এবং ইলেকশন ক্যাম্পেইন এ মানুষের গাদাগাদি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম ও বিধিনিষেধের বরখেলা , প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সংগে যারা ভ্রমণ করেন তাদের এবং অনেক সমর্থকদের ম্যস্ক না পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ইত্যাদি কারণে সংক্রমণ আবারো বেড়ে গেছে। এখনতো খোদ হোয়াইট হাউজেই অনেকে আক্রান্ত। যতই বড় গলায় বলা হোক না কেন করোনা ভাইরাসকে ভয় পাওয়ার মত তেমন কোন কারণ নেই তবে বিজ্ঞান বলে , বিশেষজ্ঞরা বলেন ভাইরাস নিশ্চিতভাবেই , বিশেষত ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত এবং গ্রহণ না করা হলে , ভীষণ ছোঁয়াচে ; মারাত্মক ও বটে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ফিরে এসে বলতে শুরু করেছেন যে করোনা আক্রান্ত হয়ে রোগটিকে যতটুকু বুঝে এসেছেন তাতে মনে করছেন এটি মারাত্মক কোন ব্যাধি নয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন এই বলে যে এ রোগে ভয়ের কিছুই নে । রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশায় এ ধরনের বক্তব্য জনসাধারণের জন্য কত যে ক্ষতিকর তা যুক্তরাষ্ট্রে কোবিড- ১৯ এ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দেখলেই প্রতীয়মান হয়। দু ক্ষেত্রেই বিশ্বে প্রথম স্থানে আছে দেশটি । ভারত ও ব্রাজিল আছে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে । এ দুটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ ও করোনা নিয়ে এমনতরো ‘পরোয়া নেই’ ধরনের কথাবার্তা বলছিলেন শুরু থেকেই । উল্লেখ করা যেতে পারে যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ও নাকি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণেই ।
এর মধ্যে ও গত ২-৩ সপ্তাহে করোনা বিষয়ক দুটো ভিন্ন ধরনের খবর নজরে এসেছে । অতি সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের ‘গুড কোয়েশ্চেন’ শীর্ষক ক্ষুদে নিউজে টারা ল বলেছেন, আমেরিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাবা-মা ভীষণ খুশী কারণ তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক(১৮ থেকে ২৯)বয়স্ক ছেলে মেয়েরা এখন তাদের সাথে থাকছে । এ রকম সচরাচর দেখা যায় না । গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দার সময় ৪৮% তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকুরী স্থান ছেড়ে ঘোরতর অর্থনৈতিক টানাপোড়নে পরে মা-বাবার কাছে এসে থাকতে বাধ্য হয়েছিল । কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সে রেকর্ড ভেঙ্গে উল্লেখিত বয়সের সন্তানদের পিতামাতা বা অভিভাবক সুলভ ভাইবোনদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরো’র দেয়া সাম্প্রতিক তথ্য পিউ গবেষণা কেন্দ্র বিশ্লেষণ করে এ বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে আনুমানিক ২.৬ মিলিয়ন সাবালক ছেলেমেয়ে বাপ বা মা এদের অন্তত একজনের সাথে থাকছে । জুলাইতে এ সংখ্যা ২৬.৬ মিলিয়নে দাঁড়ায়। এ সংখ্যা দেশের মোট যুব সম্প্রদায়ের ৫২% । যেখানে বড়দিন বা বিশেষ উৎসব ছাড়া এদের বেশীর ভাগই ফোন , মেসেঞ্জার ইত্যাদি ইলেকট্রনিক মাধ্যম এবং কার্ড ইত্যাদির ব্যবহারে যোগাযোগ করতো তারা স্বশরীরে প্রায় অষ্টপ্রহর পিতামাতার মধুর সান্নিধ্যে সময় কাটলে কোন বাপমা খুশী নাহয় । সাংস্কৃতিক মুল্যাবোধের এই যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন তার জন্য করোনাকে বাহবা দিতেই হয় । স্কুল , কলেজ বন্ধ , চাকরীচ্যুতি , বা কাজের ঘণ্টা কমে যাওয়া, করোনা সংক্রমণের আধিক্য এবং মূলত অর্থ কষ্ট এ স্বাগত পরিবর্তনের জন্য দায়ী । করোনা উত্তর পরিস্স্থিতে পরিবর্তিত এ অবস্থা আংশিক ভাবে টিকে থাকলে ও তা এ দেশের বাপমা’র জন্য অনেক বড়ো পাওয়া হবে।
দ্বিতীয় খবরটির উৎস সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উচ্চারিত হয়েছে অনেক দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানের দেয়া ভাষণে। করোনা মোকাবেলায় বিশ্বের দেশসমূহ যে ঐক্য ও সমজোতা প্রদর্শন করছে তার প্রশংসাবাদের সাথে সাথে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার ও বিতরণে সকল রাষ্ট্র যাতে সুবিধা পায় তার আশাবাদ ও তারা রেখেছেন । বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন করোনা বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে , সঠিক ভাবে এ সঙ্কট মোকাবেলার জন্য নেতাসুলভ গুণাবলী কর্ষণ, লালন ও প্রয়োগের প্রয়োজনের কথা ও তিনি বলেছেন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ সময়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় নিরন্তর আন্তঃরাষ্ট্রীয় তথা বহুজাতিক যোগাযোগ ও সমন্বয় যে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে তাও স্পষ্ট করে সামনে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কভিড – ১৯ আমাদের সবাইকে একই সমান্তরালে নিয়ে এসেছে যার চ্যালেঞ্জ ও মোকাবেলা সম্মিলিতভাবে করতে হবে । জীবন ও জীবিকা – এ দু ফ্রন্টেই সমানভাবে জোর দিয়ে করোনা সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দৈন্য থেকে উত্তরণের পথ খোঁজে নেয়ার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন শান্তি , সংহতি ও নিরাপত্তা সংস্কৃতির বৈশ্বিক পরিমণ্ডল সাবলীল ও গতিশীল নিশ্চিত করা ছাড়া করোনা কালে ও পরবর্তী সময়ে কোন দেশ বা জাতিই শান্তি ও সমবৃদ্ধির সাথে ঠিকে থাকতে পারবে না ।
Posted ১:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh