ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
বাংলাদেশের বান্দরবন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমার দূরত্ব প্রায় ১২, ০০০ মাইল। উইকিপেডিয়ার মতে ১৩,৫১৩ কিলোমিটার। বান্দরবান এবং ওকালহোমা – দু’টি অঞ্চলই একসময় পুরোপুরিই উপজাতি অধ্যুষিত এলাকা ছিল। এখনো এ দু জায়গায়ই প্রচুর পাহাড়ী আদিবাসী বা উপজাতি বসবাস করে। অনেকে এদের নৃতাত্ত্বিক গ্রুপ ও বলে। বহু গোত্রে বিভক্ত এ সব আদিবাসী জনগোষ্ঠী। যুক্তরাষ্ট্রে নির্দিষ্ট করা ইন্ডিয়ান টেরিটরিতে এরা বসবাস করে অনেকটা স্বায়ত্ত শাসিত নেশন হিসেবে। বাংলাদেশে অবশ্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভিন্নতর। প্রবন্ধটির কোন এক পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে। এখানে বলা প্রাসঙ্গিক হবে যে জীবনযাত্রার বিভিন্ন বিষয়ে, যেমন কৃষ্টি, সংস্কৃতি, মুল্যবোধ যোগাযোগ মাধ্যম বা ভাষা, আচার-আচরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে স্বকীয়তা যতটা সম্ভব বজায় রাখা সম্ভব হয় এ সব প্রয়োজন থেকেই এ আলাদা ব্যবস্থা। তবে, সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহের মূল স্রোতধারা থেকে সার্বভৌমত্বের খাতিরে বিচ্ছিন্ন থাকার অসুবিধে যে অনেক তা উপজাতীয়দের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে শোচনীয় অবস্থা তা অনুধাবন করার চেষ্টা করলেই বুঝা যায়।
ওকলাহোমা মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত জনপদ বা নেটিভ ষ্টেট। রাজ্যটির পূর্বাঞ্চল মাসচগী (Muscogee) বা ক্রিক নেশন নামে পরিচিত। বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে ১৬২০ সালে ইউরোপিয়ানরা এসে উত্তর আমেরিকায় কলোনি প্রতিষ্ঠার পূর্বে বর্তমানকার উত্তর আমেরিকায় প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোকের বসবাস ছিল। আদি বাসিন্দাদের হাজারের ও বেশী সার্বভৌম নেশন সমন্বয়ে সগৌরবে এই বিশাল অঞ্চল ও জনপদ ব্যবস্থিত ছিল। ইউরোপের মত মহামারী, রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব প্রায় ছিলই না। হারবাল মেডেসিন, দন্তচিকিৎসা এমনকি সার্জারির ও প্রচলন ছিল। পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো।
১৮৩০ সালের ইন্ডিয়ান রিমুভাল অ্যাক্টের আওতায় দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি বড় ট্রাইব চেরকি (Cherokee), চিকাসও (Cherokee), চক্তাও (Choctaw), ক্রিক (Creek), এবং সেমাইনল (Seminole) নেশনগুলোকে হাজার হাজার মাইল দূরের পিতৃপুরুষদের আবসভুমি থেকে খেদিয়ে ওকলাহোমাকে ইন্ডিয়ান টেরিটরি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে নিয়ে আসা হয় । কিন্তুগিরঘ ২০০ বছর পার হয়ে গেলে ও এ সব উপজাতীয় নেশনগুলোতে কোন চিকিৎসা সেবা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা প্রদানের কোন অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বিগত এক দশকের কিছু বেশী সময় যাবত বিস্তর প্রচেষ্টা নেয়ার ফলশ্রুতিতে ওকলাহোমা ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অস্তিওপেতিক মেডিসিন (Osteopathic Medicine) কলেজ চেরকী নেশনে খোলা হয়। ওজরাক পর্বতমালার (Ozark Mountains) পাদদেশে রাজধানী তালেকুয়া’তে ওকলাহোমা ষ্টেট ইউনিভার্সিটি এবং সার্বভৌম ট্রাইবাল গভর্নমেন্টের মধ্যে সাক্ষরিক সমযোতা চুক্তি অনুযায়ী অংশদারীত্বের মাধ্যমে কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে । ইতোমধ্যেই ২০০৯ এ ফ্যামিলি মেডিসিন এবং ২০১৩ সালে ইন্টারনাল মেডিসিন বিষয়ে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এ কর্মসূচীর আওতায় আরও বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি ওকলাহোমার প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার বঞ্চিত আদিবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান শুরু হয়েছে। এই প্রথম বারের মত বিভিন্ন সংগঠন , যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, সার্বভৌম নেশন, চেরকি নেশন বিজনেস, ইউএস পাবলিক হেলথ সার্ভিস এমনতরো প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত অংশগ্রহনে শুধুমাত্র একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা নয়, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অতি প্রয়োজনীয় একটি সেবা প্রদানের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। কেমন করে ওকলাহোমায় জোরপূর্বক স্থানান্থরের প্রায় ২০০ বছর পর এ দুঃসাধ্য কাজটি সম্ভব হল এ নিয়ে আরও আলোচনা আগামী পর্বের জন্য রেখে আমরা এ পর্যায়ে প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার দূরবর্তী বাংলাদেশের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আলোচনার প্রয়াস নেব।
বান্দরবান ইউনিভার্সিটি’র প্রথম ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য আমার বিশিষ্ট বন্ধু ও এককালীন সহকর্মী (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা কালীন সময়ে)প্রফেসর ড. ইমাম আলী’কে অনুরোধ আমাকে এ লেখাটির ব্যাপারে সহায়তা করার জন্যে মূলত তাঁর দেয়া তথ্য উপাত্তের উপর নির্ভর করেই প্রবন্ধের বান্দরবন বিশ্ববিদ্যালয় অংশটি। ইউকিপেডিয়ার সহায়তা ও অকাতরে নেয়া হয়েছে , বিশেষত ঐতিহাসিক কিছু তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহে।
ওকলাহোমা ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে চেরকি অস্তিওপ্যাথিক মেডিসিন কলেজ প্রতিষ্ঠা যেমন উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ২০১৯ সালে বান্দরবান ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠা ও তেমনি বাংলাদেশে প্রাইভেট-পাবলিক অংশগ্রহণে সৃষ্ট প্রথম সফলজনক উদ্যোগ। বান্দরবন বাংলাদেশে তিনটির মধ্যে একটি পাহাড়-পর্বত সংকুল পার্বত্য জেলা (hill district) । এ জেলায় মোট ১১টি এথনিক গ্রুপ (Ethnic Groups) বা আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে । এগুলো হলো : মারমা (Marma), ম্রু (Mro), ত্রিপুরা (Tripura), বম (Bom), তেংচাঙ্গা (Tanchanga), চাকমা (Chakma), চাক (Chak), কিয়াং (Chakma), লুসাই (Chak) এবং পাঙ্কুয়া (Pankhoa)। (চলবে)
Posted ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh