বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

প্রাচুর্যের মাঝে দারিদ্র্য

ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ   |   বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১

প্রাচুর্যের মাঝে দারিদ্র্য

প্রবন্ধটির প্রথম অংশে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে সীমাহীন বৈভব, বিত্তের দেশ আমেরিকায় প্রচুর লোক দারিদ্র্যের মধ্যে কালাতিপাত করে। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ের দ্বিতীয় টার্মে যে উন্নয়নের জোয়ার পরিলক্ষিত হচ্ছিল তার জের হিসেবে পান্ডেমিক বিভীষিকা শুরু হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে ২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যানে দারিদ্র্য সীমা ১১.১ শতাংশে নেমে এসেছিল (তথ্যসূত্র: ইউ এস সেন্সাস ব্যুরো ২০২০ এসেসমেন্ট)। দনালদ ট্র্যাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ২০২০ সালের মে থেকে অক্টোবর সময়টাতে ৮ মিলিয়ন আমেরিকান দারিদ্র্য অবস্থায় নিপতিত হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদা প্রায় সব মানদণ্ডেই এ দারিদ্র্য লক্ষ্য করা যায়। প্যান্ডমিকের পূর্বে ৪৩.৫ মিলিয়ন আমেরিকান দারিদ্র্য অবস্থায় অসহায় জীবনযাপন করছিল । মহামারী সৃষ্ট কারণে সংখ্যাটি ৮ মিলিয়ন বেড়ে গেলে তা ৫৫ মিলিয়নে পৌঁছে গেছে বলে মনে করা হয় (দেখুন: উইকিপেডিয়া – Poverty in America Today) । এ সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ১৬.৭ শতাংশ। তুলনামূলক ভাবে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে আফ্রিকান-আমেরিকানদের মধ্যে দারিদ্র্যের প্রকোপ বেশী । শিশু-কিশোরদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দরিদ্র অবস্থায় বাস করে । ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১১.৯ মিলিয়ন ছেলে -মেয়ে যা মোট চিলড্রেনদের সংখ্যার ১৬.২ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এদের মধ্যে ২.৫ মিলিয়ন প্রতি বছর গৃহহীন অবস্থায় দিন কাটায় । বয়স্ক বা সিনিয়রদের মধ্যে গৃহহীন প্রায় ১৪.১%।

বিভিন্ন এথনিক গ্রুপের মধ্যে ২৫.৪% নেটিভ আমেরিকান, ২০.৮% কৃষ্ণাঙ্গ , এবং ১৭.৬% হিস্পানিক (যে কোন রেস ভুক্ত হউক না কেন) দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে। ৯৩.৬ মিলিয়ন আমেরিকান যা মোট জন সংখ্যার ২৯.৯% দারিদ্র্য সীমার খুবই সন্নিকটে বাস করে, এতই যে এদের আয় এর ২% কমে গেলে প্রকট দরিদ্র গ্রুপে নেমে আসবে। শ্বেতাঙ্গ এবং এশিয়ানদের মধ্যে ১০.১% করে লোক দারিদ্র্য সীমার নীচে বাস করে । (তথ্য ইউকেপেডিয়া ঢ়ড়াবৎঃুঁংধ.ড়ৎম থেকে নেয়া হয়েছে)। পরিতাপের বিষয় যে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ৫.৩% বা ১৭.৩ মিলিয়ন লোক চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে যাদের আয় সরকার নিরূপিত দারিদ্র্য সীমার জন্য যে আয় তার ৫০ শতাংশ কম। সরকার নিরূপিত আয় যা দারিদ্র সীমারেখা নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয় তা ২০১৮ সালে ছিল এ রকম: একজনের জন্য ( ডলারের হিসাবে ) ১২,৭৮৪ ডলার , দুজনের পরিবার হলে- ১৬,২৪৭; তিন জনের ১৯৯৮৫, চার জনের ২৫,৭০১ ,পাঁচ জনের ৩০,৪৫৯ , ছয় জনের হলে ৪৩,৫৩৩, সাত জনের ৩৯,১৯৪, আট জনের ৪৩,৬০২ , নয় বা এর অধিক হলে ৫১,৩৯৩ ডলার ।


আগেই উল্লেখ্য করা হয়েছে যে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দ্বিতীয় টার্মে , বিশেষত শেষ তিন বছরে আয় লাগাতার বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালে পরিবার পিছু আয় ৬৩,১৭৯ ডলারে দাঁড়িয়ে যায় যাতে প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পকে কোন কৃতিত্ব দেয়া সমীচীন হবে না কারণ এর পরিমাণটি ২০১৭’র চেয়ে তেমন বেশী ছিল না । তবে, কোভিড প্যান্ডেমিক শুরু হলে মহিলাদের আয় অনেক কমে গেলে পরিবার পিছু আয় ও নিন্মগামী হয়ে পরে ।
কোভিড মহামারী খাদ্য নিরাপত্তাকে তেমন ব্যাহত করতে পারেনি যদি ও ইউ এস ডি এ’র মতে ১১.১ শতাংশ আমেরিকান পরিবার ২০১৮ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় কবলিত ছিল। তবে, কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটির সব কয়টি সহায়তা দান কর্মসুচি , বিশেষত স্নাপ বা সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন প্রোগ্রাম পুরোদমে চালু থাকায় দারিদ্র্যকে অনেকাংশে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে । কমিউনিটি কেন্দ্রিক সহায়তা কর্মসূচী, ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাবার সরবরাহ , সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক খাবার যোগান – এসব উদ্যোগ ও দারিদ্র্যকে দমিয়ে রেখেছে এ অর্থে যে অভুক্ত থেকে কেউ মরেছে এমন খবর পাওয়া গেছে কদাচিৎ।

পুঁজিবাদের দেশ আমেরিকায় প্রাচুর্যের মধ্যে ও দারিদ্র্য অবস্থায় ২০১৮ সালে ৩৮.১ মিলিয়ন লোক বসবাস করত। অন্য কথায় , ২০১৮ সালে দেশটিতে দারিদ্র্য হার ছিল ১১.৮ শতাংশ । দরিদ্র জনসাধারণ, বিশেষত যারা শহর-বন্দরে থাকে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের অভাব পূরণ মূলত বেসরকারি উদ্যোগে হয়ে থাকে । তবে , আমেরিকায় দরিদ্র যারা তাদের আবাসনের সংস্থান একটি বিরাট সমস্যা। নিউ ইয়র্ক , শিকাগো ইত্যাদির মত বড় বড় শহরে বিরাট সংখ্যক নারী-পুরুষ ফুটপাত , সাব-ওয়ে স্টেশন , ও বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে রাত কাটায় যা নানান ধরনের সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । প্রতি রাতে এদেশে দশ হাজারে ১৭ জন লোক গৃহহীন অবস্থায় রাস্তাঘাটে রাত কাটায়। ২০১৯ সালে নেয়া জাতীয়ভিত্তিক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে যে গৃহহীনদের মধ্যে প্রায় ৭০% একা এখানে সেখানে রাত কাটায়। সংখ্যার হিসেবে এরা ৩৯৬,০৪৫ জন। ১৭১,৬৭০ জন পরিবারের সদস্যসহ গৃহহীন । নিরিন্তর যারা গৃহহীন তাদের সংখ্যা ৯৬,১৪১, যুদ্ধ ফেরত ৩৭,০৮৫ এবং যুব সম্প্রদায়ভুক্ত ৩৫,০৩৮ জন। আশ্রয় কেন্দ্রে ২০১৮ সালে মোট গৃহহীনদের (৫৫২,৮৩০) মধ্যে ১৯৪,৪৬৭ জন বা ৩৫% পুরোপুরি গৃহহীন ছিল । আশ্রয় কেন্দ্রে বা শেল্টারে থাকত ৩৫৮,৩৬৩ বা মোট গৃহহীনদের ৬৫ শতাংশ । সাড়া আমেরিকায় প্রতি রাতে দেশটির মোট জনসংখ্যার ০.২ এ সময়ে (২০১৮ সালে) গৃহহীন অবস্থা রাত যাপন করত। প্রাচুর্যের দেশে বিরাট বিরাট দালানকোঠা , অফিস -আদালত , রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্যের শহর-নগরে রাস্তাঘাট রাতের বেলা গৃহহীন লোকজনদের দখলে থাকত। মাথাগোঁজার বিকল্প না থাকায় পুলিশের নিয়তই তাড়া খাওয়া ছাড়া তাদের গত্যন্তর এ প্রাচুর্যের দেশে নেই বললেই চলে।


advertisement

Posted ৩:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ মে ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

স্মরণে যাতনা
স্মরণে যাতনা

(1306 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.