ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
গত সংখ্যায় উল্লেখ্য করেছিলাম যে বাংলাদেশর বান্দরবন জেলার ছোট বড় মিলিয়ে মোট এগারটি উপজাতি বা সম্প্রদায় আছে। তাদের আলাদা আলাদা নৃগোষ্ঠী বলা যাবে কিনা তা এ আলোচনার বিষয় বস্তু নয়। তবে পারস্পরিক সহমর্মিতা (empathy) তাদের মধ্যে সমুজ্জ্বল এ কথা স্বীকার করতে হয়। তা না হলে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যে ও একটি উদ্দ্যেশ্য সামনে রেখে সম্প্রদায়গুলো এক হতে পেরেছে এটা একটি বিরাট অর্জন। এর জন্য যে সাংগঠনিক উদ্যোগ প্রয়োজন তা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে তা সহজেই অনুমেয় ।
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ান নেশনগুলোর মত সার্বভৌম না হলে ও বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন) প্রশাসনিক কাঠামো অংশগ্রহণ ভিত্তিক। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ভিন্নতা লক্ষণীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলো মূলত তিনটি সার্কেল যথা রাঙ্গামাটিতে চাকমা (Chakma) সার্কেল, খাগড়াছড়িতে মং (Chakma) সার্কেল এবং বান্দরবন জেলায় বং (Chakma) সার্কেল। প্রতিটি সার্কেলের প্রধান বয়া চীফ হলেন রাজা। বান্দরবন সার্কেলের বর্তমান রাজা উ চু প্রু মারমা (U Cho Prue Marma)। দেশের অন্যান্য জেলার মত বান্দরবনে ও ডেপুটি কমিশনার বা জেলা প্রশাসক আছেন, জেলা পরিষদ ও আছে। ১৯৮১ সালের এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখে বান্দরবনকে (আয়তন ১,৭২৯.৩৬ বর্গ মাইল, লোকসংখ্যা ৩৮৮,৩৩৫ (২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী) জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পাহাড় পর্বত, গিরিশৃঙ্গে সুশোভিত বান্দরবনে জনবসতির ঘনত্ব খুবই কম ; প্রতি বর্গ মাইলে মাত্র ৮৭ জন। শিক্ষার হার ৪৩% এবং তা ঊর্ধ্বমুখী বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
আশা করা যায় বান্দরবন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার হার অচিরেই বেড়ে যাবে । পার্বত্য জেলাগুলো থেকে বেশ উল্লেখজনক সংখ্যক ছাত্র চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে । যাতায়তের দুর্ভোগ, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিগত কিছুটা সমস্যা ছাড়া ও হোস্টেল, হলে থেকে পড়াশুনা অনেক ব্যয় সাপেক্ষ। স্লেস এবং বার্ন (slash and burn) পদ্ধতিতে জুম চাষ, ও ট্রাইবাল টেক্সটাইল, ফলমূল, আদা-রসুন উৎপাদন ও বিক্রয় এসব থেকে যা আয় তা অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণের বিধায় তা থেকে ছেলে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার পড়াশুনার ব্যয়ভার নির্বাহ করা কঠিন । অল্প বয়সের ছেলে মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষা প্রদানে তেমন সমস্যা হচ্ছে না কারণ বেশ কিছু চার্চ কেন্দ্রিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন সিসিডিবি, কারিতাস এ দায়িত্ব বেশ ভাল ভাবেই পালন করে যাচ্ছে। তবে, যে হারে বাঙ্গালী মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে তাতে এ সব পরিবারের শিশু কিশোরের জন্য উন্নত মানের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা অত্যাবশ্যক (২০১১ সালের সেন্সাস অনুযায়ী জেলায় মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২১৫,৯৩৪ জন বাঙ্গালী এবং ১৪২,৪০১ জন আদিবাসী বা উপজাতীয়)।
পার্বত্য জেলাগুলোতে বসত স্থাপনকারী বাঙ্গালিরা তুলনামূলক ভাবে ঝুঁকি নিতে সদা উন্মুখ বিধায় এবং ব্যবসা-বানিজ্য, ঠিকাদারি ইত্যাদি কাজে অধিকতর পারঙ্গম এসব কারণে সহজ-সরল উপজাতীয়দের অনেক ব্যবসা বাণিজ্য এরা নিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য ইদানীং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র এবং কুঠির শিল্প কর্পোরেশন বান্দরবনে সেন্টার এবং বেশ সাজানো গোছানো শো রুম ও বিক্রয় কেন্দ্র খোলায় উপজাতীয়দের আয়ের রাস্তা অনেক সুগম হয়ে গিয়েছে। উপজাতিয়দের হাতে এবং বিশেষ ধরনের তাঁতে তৈরি বস্ত্র ছাড়া ও বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী বেশ ভাল বাজার করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে, করোনা পান্ডেমিক এসব কিছুকেই দারুণ ভাবে ব্যাহত করেছে ; যেমন করেছে সাময়িকভাবে হলে ও উচ্চশিক্ষার পীঠস্থানে পরিণত হওয়ার অপার সম্ভাবনাময় বান্দরবন বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রাকে।
ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে শক্তিশালী সংগঠন এবং সঠিক নেতৃত্ব ব্যতিরেকে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ধারণার রূপায়ন শুধু সুকঠিনই নয়, অসম্ভব ও বটে। পার্বত্য জেলা বান্দরবনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি এ উপলব্ধি এবং প্রতিষ্ঠায় প্রাথমিক উদ্যোগের কৃতিত্ব অনেকের তবে নিশ্চিতভাবে শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনেরই সিংহভাগ। এ সংগঠন বান্দরবন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করলে এতদসংক্রান্ত চিন্তাভাবনা একটি কাঠামোর মধ্যে আসে। উদ্দেশ্য, মিশন ও ভিশন অচিরেই পরিস্ফুট হতে থাকে। নেতৃত্ব যেন তৈরি হয়েই ছিল। বান্দরবন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং’কে চেয়ারম্যান ও বান্দরবন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হা’কে কো-চেয়ারম্যান করে বিনির্মিত শক্তিশালী ট্রাস্টি বোর্ড কাজে নেমে যায় । (চলবে)
Posted ১২:১৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh