ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
সত্যিকার ভাবে বলতে গেলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তদানীন্তন সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে মোড়লের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এ আসন পাকাপোক্ত করে এবং কিছুটা আনুষ্ঠানিক মর্যাদা ও দেয়। কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধ, পশ্চিম ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন ফ্রন্টে, যাই হোক না অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার ইত্যাদি কম্যুনিস্ট ব্লকের, বিশেষত সোভিয়েত রাশিয়ার মোকাবেলা করতে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরে। গণতন্ত্র, উদার মতবাদপুষ্ট আদর্শবাদ, সমাজ ও সংস্কৃতি ইত্যাদি অগুনতি ক্ষেত্রে তথাকথিত ফ্রি ওয়ার্ল্ড কার্যত আমেরিকার করায়ত্তে এসে যায়। বিভিন্ন সামরিক জোট , অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আমেরিকার নেতৃত্ব ও আধিপত্য বলতে গেলে একচেটিয়া। বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী মিলিটারি পাওয়ারের অধিকারী দেশটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ও অত্যন্ত ক্ষমতাবান।
দুনিয়ার সকল রাষ্ট্র ও শক্তি, রাশিয়া, চীন সহ যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা দিলে তা মানতে বাধ্য হয়। জাতিসঙ্ঘ, ন্যাটো ইত্যাদির মতো আন্তজাতিক সংস্থায় ও দেশটির আধিপত্যই বেশী। অবশ্য, চীন ও রাশিয়া আমেরিকার বিশ্ব আধিপত্য প্রতিহত করতে বর্তমান সময়ে খুবই তৎপর । যদিও চীন, রাশিয়া, এমনকি ভারতের সামরিক বাজেট জিডিপির নিরিখে আমেরিকা থেকে বেশী তবু ও অদ্যাবধি যুক্তরাষ্ট্রই পৃথিবীতে একমাত্র সুপারপাওয়ার। এক হিসেব মোতাবেক যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালে জিডিপির ৩.৮% বা ৬৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক খাতে ব্যয় করেছিল অঙ্কটি ছিলো সারা বিশ্বে ব্যয় ঐ বছর যা হয়েছিল (১৭৪৭ বিলিয়ন ডলার) তার তুলনায় অনেক বেশী। সারা দুনিয়ার সামরিক ক্ষেত্রে ব্যয়ের ৩৬% যুক্তরাষ্ট্র একাই খরচ করে । ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সামরিক খাতে ব্যয়ের হার অনেক বেড়ে গেছে। আমেরিকার নৌ বাহিনী সন্দেহাতীত ভাবে বিশ্বের শয়েরা। শুধু ফ্লীটের সংখ্যায় নয়, এ গুলো অতি আধুনিক সরঞ্জামাদি সজ্জিত দুনিয়ার যে কোন স্থানে নৌবাহিনীর সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা আছে।
নিঃসন্দেহে আমেরিকা সারা বিশ্বে সবচেয়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতাসম্পপ্ন রাষ্ট্র। জনসংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় হলে ও সম্পদের দিক থেকে সবচেয়ে বিত্তশালী। সারা দুনিয়ার সম্পদের এক- তৃতীয়াংশ বা ডলারের অঙ্কে ১৭.৯৭ ট্রিলিয়ন (২০১৫ সালের হিসেব মোতাবেক , সূত্র: ননপ.পড়.ঁশ) যুক্তরাষ্ট্রের একার । গড়পড়তা বার্ষিক আয় ২০১৫ সালে ছিল ৫৬,৩০০ ডলার যা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে পরে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে ও যুক্তরাষ্ট্র অগ্রভাগে। জাতিসঙ্গে জিডিপি’র মাত্র ০.২% বা ৩০ বিলিয়ন ডলার ( ২০১৩ সালের হিসেবে) দিলে ও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ । আমেরিকার প্রাইভেট কোম্পানী , ফাউন্ডেশন এবং ‘নট ফর প্রফিট’ সংগঠনগুলো বিপুল পরিণাম ডলার ও সহায়তা সামগ্রী অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে হামেশাই সাহায্য হিসাবে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বা ইউএসএইড ভইসের ৮৭টি মিশনে কাজ করে। এ সংস্থাটির পার্টশিপ আছে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩৫০০টির ও বেশী সংগঠন ও প্রোগ্রামের সাথে। ফেডারেল বাজেটের ১% বরাদ্দ এ এজেন্সি পায়।
সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ও আমেরিকার প্রভাব লক্ষণীয় এবং ঈর্ষণীয়। সারা দুনিয়াই আমেরিকাকে কোন না কোন ভাবে অনুকরণ করে। বর্তমান পৃথিবীতে ২ মিলিয়নের বেশী লোক ইংরেজিতে কথা বলে। এ ইংরেজির বেশীর ভাগই আমেরিকান ধরন ও উচ্চারণের। আমেরিকান টিভি শো, মুভি, ভিডিও গেম এবং মিউজিক এসবের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন আভ্যান্তরিন গ্রাহক ছাড়া ও আন্তর্জাতিক শ্রোতা ও দর্শক অগুনতি। বিশ্বজুড়ে এ সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাবের চিন্তা করলে বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকেনা। প্রতিবেশী দেশসমূহের, যেমন মেক্সিকো, কানাডা, সেন্ট্রাল আমেরিকা , সাউথ আমেরিকা ও এ প্রভাবের বাইরে নয় মোটেও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকান কালচারাল সেন্টার, স্কলার এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানান দেশ থেকে আসা ছাত্র, স্কলার এরা ও আমেরিকান সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
Posted ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh